Wednesday, April 15, 2020

ওয়ানপ্লাস ৮ সিরিজ এবং একটি ফ্ল্যাগশিপ কিলারের মৃত্যু

ওয়ানপ্লাস,

২০১৩ সালের ১৬ই ডিসেম্বরে প্রতিষ্ঠিত হওয়া একটি মোবাইল ফোন ব্র্যান্ড যাকে আমরা ফ্ল্যাগশিপ কিলার নামেও চিনি।

ওয়ানপ্লাস একটি ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান, যার প্রধান নির্বাহী পিটলাউ। স্বকীয় ব্র্যান্ড হলেও মূলত এটি বিবিকে ইলেকট্রনিক্স এর একটি সাবসিডারি বা অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। ওয়ানপ্লাস তাদের প্রথম স্মার্টফোন আনে ২০১৪ সালে, যার মডেল নেইম ছিল ওয়ানপ্লাস ওয়ান। তখনকার সময়ে খুবই জনপ্রিয়তা পায় সেই মডেলটি। তারই ধারাবাহিকতায় ১৫ সালে ওয়ানপ্লাস ২ এবং ওয়ানপ্লাস এক্স, ১৬ সালে ওয়ানপ্লাস ৩, ৩টি সহ এই পর্যন্ত তারা ৮টি মৌলিক সিরিজে মোট ১৫টি ডিভাইস বাজারে আনে। সবগুলো মডেল ব্যবসা সফল না হলেও, বেশিরভাগ মডেলই ছিল জনপ্রিয়তার তুঙ্গে।

ছবিসূত্র – GSMArena

“নেভার স্যাটেল” খ্যাত এই কোম্পানীর জনপ্রিয় হয়ে ওঠার অন্যতম একটি কারণ এরা কমদামে ফ্ল্যাগশিপ গ্রেড এর ফোন বাজারে আনতো। এককথায় “ফ্ল্যাগশিপ কিলার” এর তকমাটা ধারাবাহিকভাবে ওয়ানপ্লাস তাদের ঝুলিতে পুরে রেখেছিল অনেকদিন যাবত। তবে ভিন্নরকম আভাস পাওয়া যাচ্ছে তাদের সাম্প্রতিক রিলিজ হওয়া ৮ সিরিজ নিয়ে। আজকের পোস্টে থাকছে ওয়ানপ্লাস ৮ সিরিজের শর্ট স্পেক নিয়ে আলোচনা এবং ফ্ল্যাগশিপ কিলার থেকে ওয়ানপ্লাস এর ফ্ল্যাগশিপ হওয়ার গল্প।

ওয়ানপ্লাস ৮ সিরিজের সংক্ষিপ্ত স্পেসিফিকেশন

ওয়ানপ্লাস ৮ প্রো এর মূল্য –

গতকাল ১৪ই এপ্রিল,২০২০ লঞ্চিং ইভেন্টে প্রথমে তারা লঞ্চ করেছে ওয়ানপ্লাস ৮ প্রো, যাকে অনেকেই বলছে সলিড ফ্ল্যাগশিপ। দুটো ভার্সনে বাজারে আসছে ৮ প্রো, যথাক্রমে ৮/১২৮ এবং ১২/২৫৬ জিবি। মূল্য শুরু হচ্ছে ৮৯৯ ডলার থেকে এবং হায়ার ভার্সনের দাম হবে ৯৯৯ ডলার।

ডিসপ্লে এবং ক্যামেরা-

ওয়ানপ্লাস তাদের লঞ্চিং ইভেন্টে সবচেয়ে বেশি ব্র্যাগিং করেছে তাদের ডিসপ্লে নিয়ে। ১৩০০ নিটস অফ ব্রাইটনেস, ১২০ হার্জ রিফ্রেশ রেট এবং MEMC ফ্লুইড মোশন টেকনোলজি সহ ১.০৭ বিলিয়ন কালার সাপোর্টেড এই
এইচডিআর১০+ ডিসপ্লে নিয়ে ব্র্যাগিং করাই যায়। কিন্তু অনেকের কাছেই এই অতিরিক্ত কার্ভ ডিসপ্লে ভালো লাগবেনা, যেমনটা আমরা দেখেছিলাম ৭টি প্রো তে।

কোয়াড ক্যামেরা সেটআপ এর মেইন ক্যামেরাতে ৪৮ মেগাপিক্সেল এর আইএমএক্স ৬৮৯ সেন্সর , ওয়াইড এঙ্গেল লেন্সে সেইম মেগাপিক্সেলে থাকছে আইএমএক্স ৫৮৬, ৮ মেগাপিক্সেল অপটিক্যাল ইমেজ স্ট্যাবিলাইজেশন যুক্ত ৩এক্স অপটিক্যাল জুম লেন্স এবং ৫ মেগাপিক্সেল এর ডেপথ সেন্সর বা একটি কালার ফিল্টার ক্যামেরা! সবমিলিয়ে ৭টি প্রো এর সাথে কম্পেয়ার করলে আশানুরূপ কোনো পার্থক্য আপনি পাচ্ছেন না। ফ্রন্টেও অনেকটা সেইম, ১৬ মেগাপিক্সেল এর ক্যাম,যার এপার্চার ২.৫।

হার্ডওয়্যার এবং ব্যাটারি –

পরিবর্তন মেইনলি এই সেকশনে। চিপসেটে থাকছে ৭ ন্যানোমিটারের স্ন্যাপড্রাগন ৮৬৫ এবং এড্রেনো ৬৫০ জিপিইউ। যেখানে তারা লাস্ট ওয়ানপ্লাস ৭টি প্রো তে ৮৫৫+ ব্যবহার করেছিল। বুঝাই যাচ্ছে ৮ প্রো এর পারফর্ম্যান্স নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই। এছাড়াও ডুয়েল স্টেরিও ডলবি এটমস, হ্যাপটিক ভাইব্রেশন ২.০ এবং ৪৫১০ এমএ এইচ এর বিশাল ব্যাটারি মিলিয়ে এই সেকশনে কোনো প্রশ্ন তোলার সুযোগ রাখেনি ওয়ানপ্লাস।

খুবই উপকারী দারুণ একটি ফিচার এড হয়েছে এবার, সেটা হচ্ছে ৩০ ওয়াটের ওয়্যারলেস ওয়ার্প চার্জার। লঞ্চিং ইভেন্টে বেশ ভালোই কম্পারিজন হয়েছে এস২০+ এবং আইফোন ১১ প্রো ম্যাক্স এর সাথে। নরমাল চার্জিং এর দিক থেকেও অনেক হিসেবে এগিয়ে আছে ওয়ানপ্লাস ৮ প্রো।

অন্যান্য স্পেক –

আইপি ৬৮ রেটিং, সাইড সেলফি ক্যামেরা কাটআউট, ৩০ ওয়াটের দ্রুত চার্জিং সুবিধাসহ আরো বেশকিছু আকর্ষণীয় ফিচার রেখেছে তারা। তবে উপসংহারটা কী?

উপসংহারে যাবার আগে একনজরে দেখে নিই ওয়ানপ্লাস ৮ এর স্পেক

স্ন্যাপড্রাগন – ৮৬৫ প্রসেসর
৬.৫৫ ইঞ্চ FHD+ ডিসপ্লে
৯০ হার্জ রিফ্রেশ রেট
৪৩০০ এমএএইচ ব্যাটারি
আইপি৬৮ রেটিং
৪৮+১৬+২ (ম্যাক্রো) মেগাপিক্সেল রিয়ার ক্যাম
১৬ মেগাপিক্সেল ফ্রন্ট ক্যামেরা

একনজরে ওয়ানপ্লাস ৮ এর কী-ফিচার হচ্ছে এমন। কিন্তু একটু খেয়াল করলেই দেখতে পাবেন ৭টি এর সাথে কম্পেয়ার করলে খুব একটা সুবিধাজনকভাবে দাঁড়াতে পারেনা ২০০ ডলার বেশি মূল্যের ওয়ানপ্লাস ৮।

উপসংহার –

এবার ভারডিক্ট এর পালা। চরম এক্সাইটমেন্ট নিয়ে ওয়ানপ্লাস লাভাররা বসেছিল লঞ্চিং ইভেন্ট দেখতে। কিন্তু দাম রিভিলের পর থেকেই বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় শুরু হয়েছে সমালোচনা। কারণ ফ্ল্যাগশিপ কিলার হিসেবেই ওয়ানপ্লাসকে ভক্তরা আপন করে নিয়েছিল। হুট করে তাদের এই পরিবর্তন মানতে নারাজ অনেকেই। অধিকাংশ টেক লাভারদের মতে ওয়ানপ্লাস এখনো স্যামসাং, আইফোনের মত ব্র্যান্ড ভ্যালু তৈরি করতে পারেনি এবং ডলারের ডিজিটটা যখন সর্বোচ্চ ৩ অংক কিংবা ৪ অংকের ঘর ছোঁবে, তখন অনেকের কাঙ্খিত ডিভাইস হবে আইফোন ১১ প্রো বা ১১ প্রো ম্যাক্স!

করোনার ভয়াবহতায় সারা বিশ্ব থমথমে। তাই এখনি বলা যাচ্ছেনা, ওয়ানপ্লাসের এই ফ্ল্যাগশিপ সিরিজ ব্যবসায়িকভাবে কতটা সফল হবে। তবে সমালোচনা যেন থামছেই না সোশ্যাল মিডিয়ায়। যুক্ত হতে পারেন আমাদের গ্রুপ, পেজ এবং ইন্সটাগ্রামে। ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।

The post ওয়ানপ্লাস ৮ সিরিজ এবং একটি ফ্ল্যাগশিপ কিলারের মৃত্যু appeared first on ATC ToTo.


Previous Post
Next Post
Related Posts

0 comments: